শাহীন আবদুল বারী
Published:2025-07-30 10:50:33 BdST
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচননির্বাচন পেছানোর বহুপক্ষীয় ষড়যন্ত্র
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত অদৃশ্য শক্তি এবং বাধা । বহুপক্ষীয় এবং সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে একের পর এক ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল, বৈরী ও অনিশ্চিত করে তোলা হচ্ছে। করিডর, বন্দর, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন, সামরিক মহড়া, আন্তর্জাতিক তৎপরতা ও কথিত জাতীয় ঐক্যের ফাঁদ- সব কিছু মিলিয়ে নির্বাচনের স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত করার কৌশল প্রকট হয়ে উঠছে। কিছু অদৃশ্য শক্তি দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া। তাদের লক্ষ্য একটি 'নিয়ন্ত্রিত', 'নির্বাচনবিহীন' শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া। যারা রাজনৈতিক পরিবেশকে ঘোলা করে 'নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে' পুনরায় একটি তথাকথিত অন্তবর্তী সময় তৈরি করার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তার নতুন ন্যারেটিভ এবং বিদেশি স্বার্থ জড়িত একটি চক্র সক্রিয়ভাবে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত। উদ্দেশ্য স্পষ্ট- নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া, জনগণের রায়কে পাশ কাটানো এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ যখন নিজের ভাগ্য নিজে গড়তে চায়, তখন তা পরাশক্তির জন্য হয়ে ওঠে এক অস্বস্তিকর বার্তা। স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। একটি আত্মমর্যাদাশীল, স্বাধীনচেতা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে উঠলে, তা শুধু এ অঞ্চলের নয়, তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশের জন্যে অনুপ্রেরনা হয়ে উঠতে পারে- যা পরাশক্তির আধিপত্যবাদে বড় আঘাত। এ দেশে জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বকে বারবার নির্মূল করার চক্রান্ত হয়েছে। রাষ্ট্রনায়কদের হত্যা, অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা সবকিছুর পেছনে রয়েছে বিদেশি স্বার্থ আর দেশীয় দালালদের চক্রান্ত। যখন বাংলাদেশ আজ্ঞাবহ থাকে, তখন তেমন বাধা আসে না। কিন্তু যখন কেউ সত্যিকারের স্বাধীনতার কথা বলে, গণতন্ত্র ও স্বাধীন সার্বভৌম পররাষ্ট্রনীতির কথা বলে তখন শুরু হয়, তাকে থামিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র, চরিত্রহনন, অর্থনৈতিক চাপ, কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার। করিডর, বন্দর ব্যবহার এবং একের পর এক সামরিক মহড়া- এই তিনটি বিষয় বিচ্ছিন্ন নয়, বরং একটি বৃহৎ ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ। করিডর দিয়ে ভৌগোলিক প্রবেশাধিকার, বন্দর ব্যবহারে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব বিস্তার আর সামরিক মহড়ার মাধ্যমে নিরাপত্তা বলয়ে আবদ্ধ রাখার চেষ্টা সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা ক্রমেই সীমিত হচ্ছে। তার সঙ্গে সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের বাংলাদেশে শাখা খোলার প্রেক্ষাপট দেখা যায়। এটি একদিকে আন্তর্জাতিক নজরদারির ছায়া ফেলছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি প্রভাব বাড়ানোর একটি নতুন কৌশল। সব মিলিয়ে এগুলো প্রমাণ করে, বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে একটি নির্ভরশীল ভূখণ্ডে রূপান্তর করার প্রচেষ্টা চলছে।
গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রামে গণসংহতি আন্দোলনের 'জুলাই সমাবেশে' প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে। 'সুষ্ঠু পরিবেশ নেই- এই অজুহাতে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা চলছে। আমরা এই ষড়যন্ত্র মেনে নেব না।' বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের পথ যারা বাধাগ্রস্ত করবে, তারা দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ছিল দীর্ঘ ১৭ বছরের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের একটি চূড়ান্ত মুহূর্ত। এটি কোনো এক মাস বা কয়েক সপ্তাহের ক্ষণিকের প্রতিবাদের ফল নয়। বরং ২০০৮ সালের পর থেকে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অংশ গ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে মানুষ যেভাবে বারবার রাস্তায় নেমেছে, জীবন দিয়েছে, নিপীড়নের শিকার হয়েছে এবং রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে- তাদের সেসব ক্ষোভ, হতাশা ও প্রতায়েরই বিস্ফোরণ ছিল এই অভ্যুত্থান। এই আন্দোলনের পেছনে রয়েছে বঞ্চিত ভোটারদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, গণতন্ত্রহীন পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের হতাশা এবং গণমাধ্যম, বিচারব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে দেখার ক্ষোভ। শিক্ষার্থী, শ্রমিক, পেশাজীবী, মধ্যবিত্ত- সব শ্রেণির মানুষের মিলিত চেতনার ফসল ছিল এই গণঅভ্যুত্থান। মানুষ কেবল ভোটের অধিকার নয়, রাষ্ট্রের মালিকানা পুনরুদ্ধারের সংকল্প নিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়েছিল। অতএব, একে কেবল একটি মাসের আন্দোলন হিসেবে দেখলে এর গভীরতা ও বাস্তবতাকে অবমূল্যায়ন করা হবে।
বিএনপি, জামায়াতসহ কিছু দল গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় থাকলেও বেশিরভাগ প্যাডসর্বস্ব রাজনৈতিক দল ছিল নিষ্ক্রিয়। এখন এই দলগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নিচ্ছে, কিন্তু তাদের প্রতিনিধিরা অপরিচিত, সাংগঠনিক ভিত্তিও দুর্বল। ফলে প্রশ্ন উঠছে- এ সংলাপ কতদিন চলবে, এর উদ্দেশ্য কী? ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে একটি আত্মত্মমর্যাদাশীল, স্বাধীনচেতা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে উঠলে, তা শুধু এ অঞ্চলের নয়, তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে- যা পরাশক্তির আধিপত্যবাদে বড় আঘাত।
জনগণের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র বা অধিকার নয়- তাদের অগ্রাধিকার এখন কেবল ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতায় টিকে থাকা। এজন্য বারবার বলছে, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন, আগে বিচার পরে নির্বাচন, আগে জুলাই সনদ, পরে নির্বাচন ইত্যাদি। এই দুই দলই সরকার প্রশস্ত পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনীতি করছে, যা তাদের অবস্থান ও উদ্দেশ্যকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। গণঅভ্যুথানে যার রক্ত দিয়েছেন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য কোনো সুবিচার হয়নি। আহতদের সুচিকিৎসা হয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ পায়নি। বরং বিচারহীনতার সংস্কৃতি আগের চেয়েও গভীর হয়েছে। গুম-খুনের ধরন পাল্টেছে, কিন্তু নির্মমতা পাল্টায়নি। প্রশাসনে রদবদল হয়েছে, পোশাক বদলেছে, কিন্তু চরিত্র বদলায়নি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন গুলোতে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রে একটি ভয়-ভীতির সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়। ভোট দিতে না পারা, প্রার্থী হতে না পারা, স্বাধীন মতপ্রকাশ করতে না পারার যে ভয়, সেই ভয় আবার ফিরছে। মানুষের মুখ বন্ধ, চোখ নিভে গেছে, প্রতিবাদ লোপ পেয়েছে। এই অন্ধকারে আবারও ফিরে যেতে চায় না কেউ। গণতন্ত্রের প্রাণ হলো- জনগণের ভোটাধিকার। জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রকৃত মালিক। বৈধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া কোনো সরকার জনগণের আস্থা পায় না। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকার ও সংসদ জনগণের কাছে জবাবদিহি করে। নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু সরকার নির্বাচন হয় না, বরং দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য ন্যায়বিচার, অধিকার ও উন্নয়নের পথও পরিষ্কার হয়। নির্বাচন পেছানো মানে জনগণের সঙ্গে আরেক দফা প্রতারণা।
গণঅভ্যুথানের রক্ত, আত্মত্যাগ ও চেতনাকে অবমূল্যায়ন করা। জনগণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করেছিল, কিন্তু সেই আশা আজ অনিশ্চয়তায় বুঝুলে আছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প।' তিনি বিশ্বাস করেন, একটি নির্বাচিত সরকারই পারে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু সরকার এখন আগে নির্বাচন না আগে সংস্কার'- এই অজুহাতে ভোট পেছানোর ফাঁদে ফেলতে চাইছে। অথচ সত্যিকারের সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য উভয়কেই সমান্তরালে এগিয়ে নিতে হবে। গণমানুষ চায় ভোটাধিকার ফিরুক, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। তারা চায় নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটি সরকার আসুক, যাদের প্রতি তাদের আস্থা থাকবে। কিন্তু এক বছর পার হলেও অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। চব্বিশের গণঅভ্যুথানের মূল অর্জন হতে পারত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বচন ও গণভিত্তিক সরকার। তার বদলে এসেছে প্রতিনিধিত্বহীন সরকার ও অস্পষ্ট ভবিষ্যৎ। এখন নির্বাচন পেছানো মানে হবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু। এটি সেই স্বৈরাচারী ধারার ধারাবাহিকতা, যেখান থেকে জনগণ মুক্তি চেয়েছিল। সুতরাং, নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। জনগণ প্রস্তুত, তারা আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে- এটাই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তা না হলে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য জনগণের দীর্ঘ সংগ্রাম ব্যর্থ হয়ে যাবে। এখনই সময়, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের, জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংলাপের মাধ্যমে প্রকৃত ঐকমত্য নয়, বরং কোনো একটি মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। শেখ হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকলেও 'সংস্কারের পর নির্বাচন' দাবিকে ঘিরে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। বিশ্লেষকরা বলেন, এই সংলাপ দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং সেই দলের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই। কমিশনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সবসময় একটি দলের প্রস্তাবই থাকে। এর বাইরে যেতে চায় না তারা। মূল উদ্দেশ্য হলো, ধাপে ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের দাবিতে রাজি করানো।গণঅভ্যুথানের পর জামায়াত বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে আন্দোলনের প্রকৃত নেতৃত্বকে দূর্বল করার চেষ্টা করছে। জামায়াতের এই ভূমিকা আবারও প্রমাণ করে, তারা রাজনৈতিক আদর্শের চেয়ে সুবিধাকেই অগ্রাধিকার দেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের পর জনগণ আশা করেছিল, এবার একটি স্বচ্ছ, বৈষম্যহীন ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সেই আশার প্রতিফলন ছিল ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন, যার লক্ষ্য ছিল সত্যিকারের গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। তবে শুরু থেকেই এই সরকার একপাক্ষিকতার কারণে আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে। সরকারি সহযোগিতায় আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এনসিপি দেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া, জীবনযাপন ও সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেনি। দলাদলি, সিদ্ধান্তহীনতা ও তৃণমূল থেকে বিচ্ছিন্নতা তাদের জনপ্রিয়তা কমিয়েছে। তারা 'ব্র্যান্ডিং পলিটিকসে' আটকে গেছে ভাবনা আছে, কিন্তু শক্তি নেই। বক্তব্য আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আওয়ামী লীগ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আগে কোন বিচার হতে পারে না। তিনি বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিচার না দেখে নির্বাচনে যাবেনা।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কচাপ, ভারতের বৈরিতা, মালয়েশিয়ায় জঙ্গি আটক, ইউরোপের পর্যবেক্ষণ, একাধিক দেশের ভিসা জটিলতা, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলা-ইত্যাদি একাধিক ইস্যুতে বাংলাদেশ জটিল ভূরাজনৈতিক চাপ মোকাবিলা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। এ ছাড়া এখনও স্থিতিশীলতা ফেরেনি, যে কারণে চাপ বেশি হচ্ছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকার অনির্বাচিত বলে বড় দেশগুলো চাপ প্রয়োগ করে দুর্বলতার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চাপ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ইস্যু। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের জন্য প্রধান গন্তব্যস্থল। যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যে বাংলাদেশ যদি বিশেষ সুবিধা বা ছাড় দেয় তবে অন্য দেশকেও তা দিতে হবে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপন চুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে, যা ভয়ংকর। অপরদিকে গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য এখনও ভারতের ভিসা স্বাভাবিক হয়নি। উল্টো প্রতিদিনই ভারত বাংলাদেশে পুশইন করছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশিদের এখনও অনেক দেশের ভিসা পেতে কষ্ট হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই মালয়েশিয়ার এয়ারপোর্ট থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনিয়মিত পথে বিদেশ পাড়ি দেওয়ায় ইতালি সরকার বাংলাদেশিদের ওপর বিরক্ত। যার রেশ ধরে ইতালির প্রধানমন্ত্রী আগস্টে ঢাকা আসছেন। বাংলাদেশ ভিসা নিবন্ধনে মিথ্যা তথ্য দেওয়াতেই এই জটিলতা বেড়েছে। আবার মালয়েশিয়ায় জঙ্গি অভিযোগে একাধিক বাংলাদেশির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। শেষ পর্যন্ত এই সব ইস্যু নিয়ে রাজনীতির মোড় কোনদিকে যাবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে এই বিষয় গুলোও দেশের চলমান রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.